সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ নিজেদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য নদী,খাদ এমনকি সাগরের উপর দিয়েও সেতু নির্মাণ করেছে। আর সেইসব সেতুতে মানুষ রেখেছে বহুভিক উত্কর্ষতা এবং সৃজনশীলতার ছোঁয়া। তার মধ্যে কিছু এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে, আপনি অত্যন্ত সাহসী মানুষ না হলে তার উপর পা রাখতে চাইবেন না। আবার যারা অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় বা বিপদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস রাখেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রকৃতির বুকে নির্মিত সেরকম পাঁচটি ভয়ংকর সেতু সম্বন্ধে।
এশিমা ওহাসি ব্রিজ
পৃথিবীর ভয়ংকর সেতুর কথা বলা হলে শুরুর দিকে যে নামগুলো আসে, তার মধ্যে এশিমা ওহাসি সেতুটি প্রথম দিকেই থাকবে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটির শুরুর প্রান্ত ডিজাইন করা হয়েছে একদম খাড়াভাবে। যা দেখে ভয় পেতে পারেন যেকোনো চালক। প্রায় ৪৪ মিটার উঁচু সেতুটির এক প্রান্তে দাঁড়ালে মনে হবে, সেতুটি যেন অর্ধেক। অপরপ্রান্ত দেখা পেতে পাড়ি দিতে হবে পাহাড়ের মতো উঁচু সেতুটির মাঝের অংশ। জাপানের লেক নাকাওমি নদীর উপর অবস্থিত এই সেতুটি যুক্ত করেছে দু’টি শহরকে। সেতুটির বৈশিষ্ট্য শুধু ভয়ংকর ও উচ্চতাই নয়। এটার একপ্রান্ত ৫ শতাংশ এবং আরেকপ্রান্ত ৬ শতাংশেরও বেশি কাঁত হয়ে আছে। আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যার আশ্চর্য কীর্তি বলা যায় জাপানের এই ভয়ংকর সেতুকে।
সিদু রিভার ব্রিজ
চীনে অবস্থিত ভয়ংকর সুন্দর এক সেতুর নাম সিদু রিভার ব্রিজ। এটি বিশ্বের অন্যতম উঁচু সেতু। যা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ৫ হাজার ফুট দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নদী ও পর্বত ঘেরা দুটি অঞ্চলকে এক করেছে চীনের সিদু রিভার সেতুটি। যেখানে পৌঁছানো ছিল অত্যন্ত দুর্গম। সেতুটির আশেপাশেও রয়েছে অত্যন্ত মনোরম দৃশ্য। তবে ভূমি থেকে অনেক উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি ভয়ংকর সেতুর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে সবার কাছে পরিচিত।
আমেরিকার ফ্লোরিডায় অবস্থিত সানসাইন স্কাইওয়ে ব্রিজ পৃথিবীর অন্যতম ভয়ংকর ও সুন্দর সেতু। প্রায় ৬ কিলোমিটার প্রশস্তের বিশাল নদীর ওপর ৪৫০ ফুট উঁচু সানসাইন ব্রিজকে দেখায় বিশাল এক ভয়ংকর দানবের মতো। প্রতিবছর বহু মানুষ এই সেতুকে বেছে নেন নিজেদের স্বেচ্ছা মৃত্যু ঘটানোর জন্য। ৯৪ ফুট প্রশস্ত এই ব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে প্রায় ৬০ হাজার গাড়ি। সেতুর সবচেয়ে লম্বা স্প্যানটি ১২০০ ফুট দীর্ঘ।
নরওয়ের বিখ্যাত একটি সেতুর নাম স্টোরসেইসানডেট ব্রিজ। প্রথম দেখায় এটিকে ব্রিজ নয়, যেন মনে হবে দীর্ঘ আকৃতির কোনো রোলারকোস্টার। নিচুভূমি থেকে শুরু হয়ে ব্রিজের মাঝের অংশ হঠাৎ যেন পাহাড়ের মতো উপরের দিকে চলে গেছে। শুধু উচ্চতাই নয়, ব্রিজের নকশাও করা হয়েছে আঁকাবাঁকা। ভয়ংকর এই সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫০ ফুট। সেতুটির মাঝে দাঁড়ালে মনে হবে সেতুটির দুই প্রান্ত নিচে নামতে নামতে অদৃশ্য হয়ে গেছে নদীতে। এমন অদ্ভুত নকশায় সেতুটি তৈরি করার পেছনেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। জানা যায়, নরওয়ের এই অঞ্চলের আবহাওয়া হয়ে থাকে খুবই দুর্যোগপূর্ণ। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে থাকে উচ্চ গতির বাতাস। তাই হ্যারিকেন কিংবা উঁচু ঢেউ যাতে ব্রিজের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য এমন আঁকাবাঁকা ডিজাইন করা হয়েছে সেতুটি। এদিকে আরও জানা যায়, সেতুটির নির্মাণ কাজও মোটেও সহজ ছিল না। দীর্ঘ ৬ বছর বৈরি আবহাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে নির্মাণ করতে হয়েছে ভয়ংকর সুন্দর এই সেতুটি। ১৯৮৯ সালে চালু করা হয় স্টোরসেইসানডেট ব্রিজ।
মিলাও ভায়াডাক্ট ব্রিজ
ফ্রান্সে অবস্থিত মিলাও ভায়াডাক্ট ব্রিজ ইউরোপের সবচেয়ে লম্বা ক্যাবল স্ট্রীট ব্রিজ। বিস্ময়কর এই সেতুটি ৮ হাজার ফুট দীর্ঘ এবং ১০০ ফুট থেকেও কিছু বেশি তার প্রস্থ। ব্রিজের ভয়ংকর দিক হচ্ছে ভিত্তি থেকে প্রায় ১১০০ ফুট উঁচুতে। অসাধারণ নকশার জন্য এই সেতুটি ২০০৬ সালে অর্জন করেছে ‘সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনা’ পুরস্কার। দক্ষিণ ফ্রান্সে অবস্থিত এই সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় ৩ বছর। নির্মাণের সময় বাতাসের কারণে ব্রিজটির কাজে বেশ বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। পরে সেতুর দুই পাশে বেশ কয়েকটি পর্দা বসিয়ে সম্পন্ন করা হয় সেতুটির নির্মাণ কাজ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।